জলের অতি ব্যবহার ও জল সংরক্ষণ

   জলের অতি ব্যবহার রোধ ও জল সংরক্ষণ


           

প্রাণের বিকাশে ও প্রাণ ধারনে জলের ভুমিকা :-

প্রত্যেক জীবের জীবন ধারণের জন্য জল একটা অপরিহার্য উপাদান, যেমন - খাদ্যবস্তুর পাচন, পুষ্টি উপাদানের পরিবহন, রেচন ইত্যাদি প্রক্রিয়া গুলি জলের উপরে নির্ভরশীল। প্রানীদের ঘাম হিসাবে জলের নির্গমন ও তার বাস্পায়নের মাধ্যমে দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রিত হয়। উদ্ভিদের বীজের অঙ্কুরোদ্গম, সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যবস্তুর সংবহন জলের উপরে নির্ভরশীল। এছাড়া ও পুকুর, হ্রদ, নদী ও সমুদ্রের জলে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বসবাস করে। কাজেই জল ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করাই যায় না। তাই 'জলের অপর নাম জীবন' বলে পরিচিত।

       

পানীয় জলের পরিমাণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য জলের সংরক্ষণ ও সুষ্ঠ ব্যবহার।

আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীর মোট দুই তৃতীয়াংশ জল এবং বাকি অংশ স্থল। তবু ও আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ জলের জন্য ভাবতে হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুষ্ঠভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং জীব জগতকে সুস্থ পরিবেশে টিকিয়ে রাখার জন্য।
পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ জলের মধ্যে ব্যবহার যোগ্য জল অর্থাৎ, পানীয়, কৃষিকাজ ও গৃহস্থলীর বা অন্যান্য কাজের জন্য কতটা জল লাগে ও লবণাক্ত জল কতটা, তার কথা বলতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন মোট ১00% জলের মধ্যে ৯৭% লবণাক্ত আর বাকি ৩% জল ব্যবহার যোগ্য। আবার এই ৩% জলের ২% রয়েছে পর্বতশৃঙ্গের বরফ আকারে। মাত্র ১% জল নদী, ঝরনা, হ্রদ, পুকুর ও মাটির তলায় সঞ্চিত থাকে যা মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার হয়।

পানীয় জলের আবশ্যক গুনাগুন:-

১- পানীয় জলকে অবশ্যই বর্নহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন ও স্বচ্ছ হতে হবে।
২- জলে রোগ সৃষ্টিকারী কোনো ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু) থাকা চলবে না।
৩- অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত খনিজ (নাইট্রেট লবন) থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।
৪- বিষ ক্রিয়া সৃষ্টি কারী ক্ষতিকারক লবন (সায়ানাইড, ফ্লুরাইড, আর্সেনিক) থাকা উচিত নয়।


 

ব্যবহার যোগ্য জলের ব্যবহার :-

সাধারণভাবে জলকে আমরা গৃহস্থলীর, যেমন - পানীয়, রান্না, স্নান, শৌচ কাজে, জামাকাপড়, বাসনপত্র ধোয়া, গৃহপালিত জীবজন্তু পতিপালন, কৃষি কাজ ও কলকারখানার কাজে ব্যবহার করি।
এইক্ষেত্রে কৃষি কাজ ও খাদ্য উৎপাদনের জন্য ৮০% জল(ব্যবহার যোগ্য জলের শতকরা ), কল কারখানা ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০%, পানীয় ৫% ও বাকি গৃহস্থলীর অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে থাকি।
⭐এই ক্ষেত্রে কৃষিতে যে ৮০% জলের ব্যবহার হয় তা পরিবেশে বেশি ভাগটা আবার ফিরে আসে, তব রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে কিছু অংশ দুষিত হচ্ছে।

☀️পানীয় জল :-

ভূপৃষ্ঠে(নদী, জলাশয়, হ্রদ ) জলকে ধীরগামী পাতন ও দ্রুতগামী পাতন প্রক্রিয়ার সাথে জীবাণু মুক্ত করার জন্য ক্লোরিনেশন ব্যবহার হয়। অপর দিকে ভূগর্ভস্থ জল জীবাণু মুক্ত থাকলেও বর্তমানে ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লুরাইড ও আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে, যা খুবই ক্ষতিকারক, যা পরিশোধন দরকার।

⭐আর আমরা পরিকল্পনা হীন ভাবে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করার জন্য জলের তল বা লিয়ার অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে, যার দরুন গ্রীষ্মের দিকে গ্রামীণ এলাকায় টিউব কল গুলি থেকে জল উঠেছে না, যা তীব্র জলকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর জলের প্রধান সমস্যা হল গুণগত মান। এই ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে পৃথিবীর রোগের সংখ্যা যদি ১00 টি হয় তার মধ্যে ৮০টি হল জলবাহিত। অপর দিকে শিল্প কারখানা ও মানুষের বসতিতে ব্যবহৃত অপরিশোধিত জল দূষিত করে চলেছে ব্যবহার যোগ্য জলকে। জীবাণু, লোহা, তামা, সিসা ইত্যাদি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গরম জল আর ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক স্ফ্লুরাইড উপস্থিতির জন্য পানীয় জলের পরিমাণ গুণ গত মান তলানিতে এসে পৌঁছেছে।

এবার আসা যাক জনসংখ্যা ও গৃহস্থলী ব্যবহার্য জল ও পানীয় জল সম্পর্কে।
এক্ষেত্রে পানীয় জল, রান্না, স্নানের, জামাকাপড় ও বাসনপত্র ধোয়া, শৌচ কাজে ব্যবহার ইত্যাদি করার জন্য। দেখা গেছে আমাদের গৃহস্থলীর বিভিন্ন কাজের জন্য সবচেয়ে কম মাথাপিছু ৪০লিটার জল প্রতিদিন, সবচেয়ে বেশি ১৫০ লিটার জল প্রতিদিন প্রয়োজন হয়।

⭐আমরা ছোটবেলাই শিখেছি যে পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল। কিন্তু পানীয় জলের পরিমাণ যে অত্যন্ত কম, আর একথা সকলেই জানেন যে আমাদের ভারতের জনসংখ্যা যে ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে তা আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২০০ কোটি হয়ে যাবে। আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ১০ কোটি জনসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপুল জনসংখ্যার জল চাহিদা মেটানোর জন্য দরকার সুদূর প্রসারি চিন্তা ভাবনা ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা দরকার। (কারণ হিসাবে দুই মাস আগে কেরলের কথা বলা যেতে পারে যা আমরা কমবেশি সবাই জানি।)
আর বেশি জলের চাহিদা মেটানো হয় ভৌমজল(মাটির নীচে জল) থেকে, কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কম করে ৮ টি জেলার ভৌমজলে বিষাক্ত আর্সেনিক ও ফ্লুরাইড দ্বারা দূষিত।


গৃহস্থলীর করণীয় :-

প্রতি গ্রামীন পরিবারের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, যে জলের ব্যবহার করি তা সুষ্ঠ ভাবে ব্যবহারের সাথে সাথে জল অপচয় ও অভাবকে প্রতিহত করা যাবে। এই ক্ষেত্রে মহিলারা খব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে যা অপচয় ও অভাব দুটি রোধ করতে সক্ষম হবে ও আগামী প্রজন্মের পানীয় জলের সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে পারবে বলে আমার মনে হয়।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে পুরুষরা জল সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকবে। উভয়কে সচেতনতার মাধ্যমে যতটা সম্ভব জলের অপচয় রোধ করা সম্ভব তাই আমাদের মঙ্গল। কারণ 'বিন্দু বিন্দু দিয়ে সিন্ধু হয়েছে'।

⚱️গ্রামীন পরিবার ব্যবহৃত জলের চাহিদা (প্রায়)

১- মাথাপিছু পানীয়, স্নান, শৌচ কাজে =৩০ লিটার
২- রান্না, বাসন ধোয়া (পরিবারপিছু)    =২০ লিটার
৩- জামাকাপড় ধোয়া                        = ২০ লিটার
৪- অন্যান্য কাজের.                          =১০ লিটার
  • মোট প্রতি পরিবার পিছু খরচ        =৮০ লিটার

এই ক্ষেত্রে স্নান ও বাসনপত্র, জামাকাপড় যদি পুকুর, নদী ও জলাশয়ে করা যায় তবে কিছু জল সংরক্ষণ করা যাবে। তবে বর্তমানে গ্রামের দিকে বেশিরভাগ পুকুরের জলে প্লাস্টিকের ফলে দূষিত হচ্ছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আর গ্রামের দিকে যেটা পানীয় জল সেটাই গৃহস্থলীর অন্য কাজে ব্যবহার করা হয় যা মোটেও কাম্য নয়। এটাও ঠিক যে দূষিত পুকুরের জল ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

এই ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা ও একটা বড় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। যা আগামী প্রজন্মক জল সংকট থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাঁদের জন্য ও তো বিশুদ্ধ পানীয় জল রাখতে হবে।

আপনি কী মনে করেন কমেন্ট করতে পারেন ও কিছু যুক্ত করতে হলে কমেন্ট করে দিন আপলোড করে দেব🙏♥️🌹।
এই লেখাটা জল সম্পর্কে আমার অল্পবিস্তর সচেতন করতে ও পাঠক গনকে কিছু জানানোর জন্য রচিত, তবে এই বিষয়টির সীমান্ত নেই বললেই চলে, তার এক বিন্দু মাত্র দিলাম , নমস্কার নেবেন। 

(তথ্য সংগ্রহ - জীবন বিজ্ঞান, পরিবেশ বিদ্যা, ও অনলাইন কিছু তথ্য) 

Comments

সোসাল মিডিয়ায় আমাদের এত লেখালেখিই সার হচ্ছে। না প্রসাশন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে,না আমরা নিচ্ছি, সবারই গা ছাড়া মনোভাব ।

Popular posts from this blog

NRC-in Beagali